,

হবিগঞ্জের শিবপুরে ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে সদ্য নির্মিত সড়কের কালভার্ট ভেঙে জনদুর্ভোগ চরমে

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন ॥ সিডিউল মোতাবেক নয়, বরং নি¤œমানের কাজ করায় হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলাধীন পল্লী শিবপুর এলাকায় সদ্য নির্মিত সড়ক সংশ্লিষ্ট একটি কালভার্ট এক মাসের ব্যবধানে ভেঙে গেছে। শুধু তাই নয়, তড়িঘড়ি করে এই কাজের বিপরীতে বিল বাবদ ইতিমধ্যে ৯০ ভাগ টাকাও পরিশোধ করেছে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে জনমনে যেমন চলছে নানান কানাঘোষা, তেমনি যান চলাচলে বিঘœ ঘটায় জনসাধারনের দুর্ভোগ এখন চরমে। এলজিইডি ও নানা সূত্র মতে, প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে সম্প্রতি এলজিইডি ওই এলাকায় এক কিলোমিটার আরসিসি সড়ক সহ তৎসংশ্লিস্ট অন্তত ৪ টি কালভার্ট নির্মাণ কাজে হাত দেন। তন্মধ্যে প্রতিটি কালভার্ট নির্মাণ খরচ বাবদ ধরা হয়েছে প্রায় ৮০/৮৫ হাজার টাকা করে। আর এই কাজের দায়িত্ব পান পাশ্ববর্তী জেলা বি-বাড়িয়ার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘হাসান এন্টারপ্রাইজ’র স্বত্বাধিকারী খাইরুল হাসান। তিনি নিজে এই কাজের তেমন দেখবাল না করে বরং অজ্ঞাত কারনে সংশ্লিস্ট এলাকার এক কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার ও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের এক সময়ের একাধিকবার সভাপতি ছিলেন, সেই লিয়াকত আলীর (পলাতক) ভাই মুড়াকড়ি গ্রামের বাসিন্দা নবাব মিয়াকে সাব ঠিকাদারের দায়িত্ব দেন। যিনি নানা কারনে এলাকায় বিতর্কিত, এমনকি যিনি নিজে এও বলে বেড়ান, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে তার সম্প”ক্ততা শুধু নয় বরং সংশ্লিস্ট দলের একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও তাদের পরিবারের কয়েক সদস্যের সাথেও তার রয়েছে বেশ সখ্যতা। আর এমন প্রভাবের দাপটেই সংশ্লিস্ট উপজেলা ও তৎসংশ্লিস্ট প্রকৌশলীদের হাত করে উক্ত সড়ক নির্মানের পাশাপাশি তাদেরই পরোক্ষ সহযোগিতায় সিডিউল মোতাবেক নয় বরং যথাযথ সিমেন্ট, বালু, রড, ব্যবহার না করে একতরফাভাবেই পলিমাটি মিশ্রিত সিমেন্ট দিয়ে ওই কালভার্ট নির্মান কাজ শেষ করেন। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র ১৫/২০ দিনের মাথায় কালভার্টটির মধ্যবর্তী স্থান ভেঙ্গে বড় ধরনের গর্তের স”ষ্টি হয়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে, ছোট-বড় যান চলাচল। জনদুর্ভোগ উঠেছে চরমে। এদিকে ভেঙে যাওয়া এই কালভার্টের দুরবস্থার পাশাপাশি এখন নতুন করে এও প্রশ্ন জেগেছে যে, নিম্মমানের কাজের প্রাথমিক গন্ধ মেলায় অন্যান্য কালভার্ট গুলোরইবা কেমন পরিস্থিতি হবে তা সহজেই অনুমেয়। এছাড়া একই সাথে শুরু সংশ্লিস্ট সড়কটিরও হয়তো একইভাবে নি¤œমানের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। যা নিয়ে স্থানীয় জনসাধারন এখন নানান প্রশ্নের উদ্ভব ঘটিয়েছেন। ফলে সিডিউল মোতাবেক সংশ্লিস্ট সড়কটির শতভাগ কাজ হয়েছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে এলাকাবাসীর অভিমত। এ প্রসঙ্গে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উবায়েদুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি  বলেন, প্রায় একমাসের মাথায় ওই কালভার্ট ভেঙ্গে যাবার বিষয়টি তার দৃষ্টিতে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি তিনি তলিয়ে দেখবেন। তিনি আরও জানান, তিনি আগামী সোমবার সংশ্লিস্ট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কালভার্ট ও সড়কের পরিস্থিতি তলিয়ে দেখবেন। এছাড়া একই বিষয় নিয়ে সংশ্লিস্ট উপজেলা প্রকৌশলী ইমরান খান এ প্রতিনিধির নিকট হযবরল উত্তরে তা স্বীকার করে বলেন, ৭০ লাখ টাকায় সম্প্রতি ওই সড়ক সহ ৪ টি কালভার্টের কাজ উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাব-ঠিকাদার হয়ে (প্রতিনিধি) নবাব মিয়া শুরু করেন। যিনি মড়াকড়ি গ্রামের লিয়াকতের ভাই। সংশ্লিস্ট কাজে বরাদ্ধকৃত অর্থ নিয়ে খানিকটা জটিলতা স”ষ্টি হওয়ায় হাসান এন্টার প্রাইজের মূল ঠিকাদারের পক্ষে সাব-ঠিকাদার (প্রতিনিধি) নবাব মিয়া সিডিউল অনুসরন না করেই আগে ভাগেই নাকি নিজ উদ্যোগে এবং তার স্বার্থে উক্ত কালভার্টের কাজ শেষ করেন। তিনি আরও জানান, কালভার্ট উক্ত সংশ্লিস্ট সড়কটি তিনি পরিদর্শন ও এই কাজের মানও দেখবাল করেছেন এবং ইতিমধ্যে বিল বাবদ ৯০ ভাগ অর্থও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করে ফেলেছেন। এমতাবস্থায় তার নিকট প্রশ্ন ছিল, কাজের মান যদি দেখবাল করেই থাকেন, তাহলে কালভার্টটি একমাসের মধ্যে ভেঙ্গে গেল কেন? এতে তিনি নিশ্চুপ। এদিকে এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোঃ আবু জাকির সিকান্দরের সাথে টেলিফোনে এ বিষয় নিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে এ প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি উক্ত কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি অবহিত নন। তবে তিনি সম্প্রতি উক্ত সড়ক সহ কালভার্টগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে এমন কথা স্বীকার করে আরও বলেন, এই কাজের বিপরীতে শুধু মাত্র সড়ক নির্মানের অর্থ ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। কোন কালভার্টের অর্থ দেয়া হয়নি। এমন জবাবে তার নিকট প্রশ্ন রাখা হয় যে, সড়ক সংশ্লিষ্ট একই বরাদ্ধে যদি কালভার্টের কাজ হয়ে থাকে, তাহলে কেন পৃথকভাবে টাকা ছাড় দেয়া হল বা সংশ্লিস্ট কাজের মান শতভাগ নিশ্চিত না হয়েই কেন সরকারী অর্থ ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হলো এমন প্রশ্নের জবাব অনেকটাই তিনি এড়িয়ে যান। তবে তিনি এ প্রতিনিধিকে উক্ত বিষয় নিয়ে নিউজ না করার অনুরোধ জানিয়ে তা দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তিরাও একই রকম তদ্বির থেকে পিছিয়ে নেই। এদিকে সংশ্লিস্ট বিষয়টি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ অবহিত হলে অভিযোগ পেলে তিনিও তা খতিয়ে দেখবেন বলে এ প্রতিনিধিকে আশ্বস্ত করেন। সূত্র মতে, উক্ত সড়ক -কালভার্ট নির্মানের নামে এত বড় পুকুর চুরির ঘটনা নিয়ে এ প্রতিনিধি সংশ্লিস্ট সকল সেক্টরের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করার পর শিবপুর সড়কের ভেঙ্গে যাওয়া কালভার্টটি রাতের আধারে জোরাতালি দিয়ে পুনঃমেরামতের চেষ্টা শুরু করার তথ্য মিলেছে। এ যেন শাঁক  দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। তবে, সংশ্লিস্ট উপজেলার ইউএও মোঃ উবায়েদ এর ভিন্ন কথা, ভেঙ্গে যাওয়া কালভার্ট সম্পূর্ন্ন নতুন ভাবেই পুণঃনির্মাণ করা হবে এবং সংশ্লিস্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষতিপূরনের টাকাও নিয়মমাফিক আদায় করা হবে। প্রশ্ন উঠেছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও লাখাই উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সহ একাধিক কর্মকর্তাও স্বাক্ষর সহ বিল পরিশোধের চেক প্রদান করা হয়ে থাকলে কেউইতো সরকারী অর্থ অপচয়ের দায়ভার এড়াতে পারেন কি ? অথবা সরকারী অর্থে এহেন উন্নয়নমূলক কাজে দায়িত্বরত কর্মকর্তাগনের উদাসীনতা-অবহেলা তদোপুরি স্বজনপ্রীতি আর তড়িঘড়ি করে অর্থ ছাড়ের নেপথ্যে হেতু কি?


     এই বিভাগের আরো খবর